পূর্ববর্তী পাঠসমূহ থেকে আমরা জেনেছি, ঈশ্বরের স্বরূপ নানাভাবে প্রকাশিত। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনি নিরাকার। তাঁকে বিভিন্ন ধর্মমতের অনুসারীরা নানা নামে অভিহিত করেন। আমরা তাঁর নিরাকার স্বরূপকে ব্রহ্ম বলে থাকি। তিনি কৃপাময় দয়াময় বলে তাঁকে ভগবান বলা হয়। আবার ঈশ্বর দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন করেন এবং সত্য ও ন্যায়-
নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কোনো-না-কোনো রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। তাঁর সেই বিশেষ বিশেষ রূপকে অবতার বলা হয়।
যেমন- শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ, মৎস্য অবতার প্রভৃতি।
অন্যদিকে, ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি যখন আকার পায় তখন তাঁকে দেবতা বা দেবদেবী বলে। যেমন- ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ঈশ্বরের তিনটি প্রধান কর্মের জন্য তিনটি প্রধান রূপ। ব্রহ্মা রূপে ঈশ্বর সৃষ্টি করেন, বিষ্ণু রূপে পালন করেন এবং শিব রূপে জীব ও জাগতিক বস্তু ধ্বংস করে ভারসাম্য রক্ষা করেন। দেবী দুর্গা ঈশ্বরের শক্তিরূপ। সরস্বতী দেবী রূপে ঈশ্বর আমাদের বিদ্যা দান করেন।
ভক্তেরা দেব-দেবীর পূজা করেন। তাঁদের স্তবস্তুতি করে তাঁদের কাছে বিশেষ বিশেষ প্রার্থনা জানান।
এর মধ্য দিয়ে প্রশ্ন জাগে তাহলে কি ঈশ্বর বহু? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তিনি নিরাকার। আবার তিনিই সাকার। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, 'একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি' (১।৬৪।৪৬) এক ব্রহ্মকেই বিপ্রগণ বহু নামে অভিহিত করেছেন। কিংবা 'একং সন্তং বহুধা কল্পয়ন্তি' (১।১১৪।৫) এক ঈশ্বরকেই সাধু-সন্তেরা বহু নামে ডাকেন এবং উপাসনা করেন। যেভাবেই উপাসনা করা হোক-না কেন, সবই ঈশ্বরের উপাসনা। সবই তাঁর কাছে পৌঁছায়।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে-
১. যারা অন্য দেবতায় ভক্তিমান হয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের পূজা করে, তারা ঈশ্বরেরই পূজা করে। (৯/২৩)
২. ঈশ্বরই সকল যজ্ঞ বা পূজার প্রাপক ও ফলদাতা। (৯/২৪)
৩. যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে, আমি তাকে সেভাবেই সন্তুষ্ট করি। মানুষেরা বিভিন্নভাবে মূলত আমার পথকেই অনুসরণ করে। (৪/১১)
সুতরাং কেবল হিন্দুধর্মাবলম্বীরা নয়, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা নিজ নিজ মত ও পথ অনুসারে একই ঈশ্বরের উপাসনা করে। এই হলো ঈশ্বরের একত্ব। ঈশ্বর নিরাকার হলেও, তাঁরই ইচ্ছায় সাকার রূপে তাঁর বিচিত্র প্রকাশ।
একক কাজ: ঈশ্বরের একত্ব সম্পর্কে পাঁচটি যুক্তি দাও। |
Read more